গণহত্যাকারী বাহিনীর নেতারা ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে : রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার :

২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ এএম | আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ এএম

ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যাকারী বাহিনীর নেতারা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ভয়াবহ অপশাসনের জন্য ক্ষমা চাওয়া তা দূরে থাক, উল্টো আদালতে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে, হাজারো শহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আরও বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারতে পলাতক হাসিনা একের পর এক হুংকার দিচ্ছে। জুলাই-আগস্টের শাজাহান খান গংরা আদালতে এসে সরকারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আদালতকে ভেংচি কাটছে, পুলিশকে থোড়াই কেয়ার করছে। হাসিনার দোসররা আসামি হয়েও আদালতে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছে তা মূলত অন্তর্র্বতী সরকারকে ‘অকার্যকর’ প্রমাণের এক গভীর চক্রান্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রশাসন নীরবতায় তারা এমন আচরণ করছে। গত ১৫ বছর বিভিন্ন পাতানো মামলায় বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা ও আলেম-ওলামাকে ডা-াবেড়ি-পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল আর এখন কারাগারে ভয়াবহ অপরাধী আওয়ামী নেতাদের জামাই আদরে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাসিনার অলিগার্করা ‘সর্ষের ভিতর ভূত’ হয়ে থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, দীর্ঘ রক্তঝরা আন্দোলনের অব্যবহিত পর থেকে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রত্যাশার প্রতিফলণ খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। হয়ত কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও গণতন্ত্রকে মজবুত কাঠামো তৈরির প্রস্তুতির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। পতিত স্বৈরাচারের দোসর, খুনের আসামীরা, প্রকাশ্যে আদালতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখে।

তিনি বলেন, পাড়া-মহল্লা, পথে-ঘাটে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের কোন কমতি নেই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পলাতক কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের গলার স্বর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের জনগণের পাচার করা টাকা পতিত স্বৈরাচারের ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করছে। শেখ হাসিনার একটি ভরসা হচ্ছে পাচার করা টাকা, সেই টাকার জোরে দেশে নানা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে “টাকায় কথা কয়”-শেখ হাসিনা এই প্রবাদটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে। মাফিয়া অর্থনীতির জোরে শেখ হাসিনা দেশের যে সম্পদ পাচার করেছেন, সেই সম্পদের মুনাফা দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চান। পতিত ফ্যাসিবাদের বড় বড় দোসররা অনেকেই প্রশাসনের হেফাজতে ছিল, কিন্ত তারা কিভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে? নিশ্চয়ই এখনও প্রশাসনের মধ্যে অনেকেই ঘাপটি মেরে আছেন, ফ্যাসিবাদের খুনি দোসরদের সহযোগীরা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা পতিত ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। তারা কোথাও কোথাও গণহত্যাকারীদের সঙ্গে আতাত করে প্রকাশ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তির সহযোগিতায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঝটিকা মিছিল করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, আঘাত করছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের, ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, শিল্পী-কুশলী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অনেকের বাড়ি-ঘর যেমন-ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের মানিকগঞ্জের বাড়ি আগুন দিয়ে ভষ্মিভূত করা হয়েছে। কোন কোন পক্ষ আছেন যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, তাদেরও নেপথ্য ইন্ধন না থাকলে ফ্যাসিস্টের অনুচররা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দুঃসাহস দেখাতো না। তিনি বলেন, মাফিয়া অর্থনীতির সৃষ্টিকারীদের হোতারা আজও কেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? যে সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়ে ফ্যাসিবাদকে প্রলম্বিতকরার ঘোষণা দিয়ে কাজ করেছেন, তারা আজ বহাল তবিয়তে তাদের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী দুঃশাসনের ২৮ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের সাথে যুক্তরা আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

রিজভী বলেন, হাট-বাজার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সেক্টরে ফ্যাসিস্টদের সিন্ডিকেট তৎপরতা বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছে, এরাই দেশের মালিক সমিতি হিসেবে গন্য। যে কারণে-চালের দাম হু-হু করে বাড়ছে, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে চলে যাচ্ছে। প্রশাসনের সর্বস্তরে এখনও দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিবাদের দোসররা বিদ্যমান আছে, কারণ-তারাই সরকারের দু-একজনকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে নাকি স্ব-পদে বহাল রয়েছেন। এ ধরনের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশাল অর্থনীতি হবে, যখন চট্টগ্রাম বন্দরের হৃদপিণ্ড বিশাল হয়: প্রধান উপদেষ্টা
ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার অপসারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দের বন্যা
কালুরঘাট সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন প্রধান উপদেষ্টার
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা
চট্টগ্রাম বন্দর চালাতে হলে আমাদের লোকই চালাবে : ড. ইউনূস
আরও
X
  

আরও পড়ুন

বিশাল অর্থনীতি হবে, যখন চট্টগ্রাম বন্দরের হৃদপিণ্ড বিশাল হয়: প্রধান উপদেষ্টা

বিশাল অর্থনীতি হবে, যখন চট্টগ্রাম বন্দরের হৃদপিণ্ড বিশাল হয়: প্রধান উপদেষ্টা

ভারত-পাকিস্তান সরাসরি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

ভারত-পাকিস্তান সরাসরি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

বাংলাদেশের বাজারে নেসলে নিয়ে এলো নিডো ৫+

বাংলাদেশের বাজারে নেসলে নিয়ে এলো নিডো ৫+

প্রায় এক দশক পর  লোগোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গুগল

প্রায় এক দশক পর লোগোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে গুগল

ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার অপসারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দের বন্যা

ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার অপসারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দের বন্যা

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন প্রধান উপদেষ্টার

কালুরঘাট সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন প্রধান উপদেষ্টার

সাম্য হত্যাকাণ্ড : ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পাশে দাঁড়িয়ে যাদের দায়ী করলেন সারজিস

সাম্য হত্যাকাণ্ড : ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পাশে দাঁড়িয়ে যাদের দায়ী করলেন সারজিস

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বৃদ্ধাকে গলাকেটে হত্যা

চট্টগ্রাম বন্দর চালাতে হলে আমাদের লোকই চালাবে : ড. ইউনূস

চট্টগ্রাম বন্দর চালাতে হলে আমাদের লোকই চালাবে : ড. ইউনূস

আশুলিয়ায় নিখোঁজের ১২ ঘন্টা পর ২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

আশুলিয়ায় নিখোঁজের ১২ ঘন্টা পর ২ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

বেনাপোল কাস্টমসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতি শুরু

বেনাপোল কাস্টমসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কলমবিরতি শুরু

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র ভরসা: প্রধান উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর একমাত্র ভরসা: প্রধান উপদেষ্টা

দূষিত শহরের শীর্ষে কুয়েত সিটি, ঢাকা ১৭তম

দূষিত শহরের শীর্ষে কুয়েত সিটি, ঢাকা ১৭তম

রাজশাহীর পুঠিয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির গ্রেফতার

রাজশাহীর পুঠিয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাব্বির গ্রেফতার

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানি এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানি এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করল ভারত

ও কাঁপছিল, কাঁদছিল, চলতে পারছিল না— নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল'

ও কাঁপছিল, কাঁদছিল, চলতে পারছিল না— নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল'

মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে ‘গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা

মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে ‘গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা

'জনতার মেয়রকে পদে বসাতে রাস্তায় নেমেছে জনতা'

'জনতার মেয়রকে পদে বসাতে রাস্তায় নেমেছে জনতা'

বাহরাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

বাহরাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ

দাউদকান্দিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২২ মামলার আসামি মামুন সম্রাট আটক

দাউদকান্দিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২২ মামলার আসামি মামুন সম্রাট আটক